ব্যাং রাজকুমারী - পর্ব ২
(রুশ রূপকথা) ভাবানুবাদঃ- অনন্যা মণ্ডল
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কিছুদিন পর আবার রাজা তাঁর তিন ছেলেকে ডেকে পাঠালেন। এবার বললেন, "আমি চাই তোমাদের প্রত্যেকের স্ত্রী আমার জন্য একটা করে পাউরুটি বানাবে। আমি দেখতে চাই কে সবথেকে সেরা রাঁধুনি।"
রাজপুত্র ইভান যখন দুঃখী মনে নিজের ঘরে ফিরে এলো। ব্যাং জিজ্ঞেস করল, "আবার কী হয়েছে? তোমাকে মন মরা দেখাচ্ছে কেন?"
ইভান উত্তর দিল, "বাবা বলেছেন তোমাকে কাল পাউরুটি বানাতে হবে।"
ঠিক আগের বারের মতো এবারও সেই ব্যাং বলল ঠিক আছে তুমি কোন চিন্তা করো না নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ো কাল সকাল বেলা উঠে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এর আগে বড় ছেলের দুই বউ রাজপুত্র ইভানের স্ত্রীর রূপে একটা ব্যাং-কে দেখে অনেক হাসি ঠাট্টা করেছিল। কিন্তু এখন ওরা বুঝতে পেরেছে এর পিছনে কোনো রহস্য নিশ্চয় আছে। তাই আগের বারের কথা মাথায় রেখে এবার দুজনে মিলে মতলব এঁটে এক বুড়িকে ডেকে পাঠালো রান্না ঘরে, এইটা দেখার জন্য যে সেই ব্যাং কীভাবে উনুনে পাউরুটি তৈরি করছে।
কিন্তু সেই ব্যাং ছিল ওদের চেয়েও চতুর। তাই ওদের চালাকি ধরে ফেলল। আর যখন সেই বুড়ি চুপি চুপি এসে উঁকি দিল রান্না ঘরে, সে দেখল ময়দা মাখার পর ব্যাং ময়দার লেচি উনুনের আগুনের মধ্যে পুরে দিচ্ছে রুটি সেঁকার জন্য।
বুড়ি তাই গিয়ে বলল দুই ভাইয়ের বউকে। সঙ্গে সঙ্গে তারা সেই রকম ভাবে রুটি বানাতে শুরু করল। অন্যদিকে রাজপুত্র ইভান ঘুমিয়ে পড়ার পর সেই ব্যাং বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে আবার রাজকন্যা ভাসিলিসার রূপ নিয়ে তার চাকর-বাকরদের হাঁক দিল, "কোথায় আমার বিশ্বস্ত বন্ধুর দল? এসো, হাজির হও। আমার জন্য কাল সকালের মধ্যে তুলতুলে নরম সাদা পাউরুটি তৈরি করো। ঠিক যেমন পাউরুটি আমি আমার বাবার সাথে খাবার টেবিলে বসে খেতাম।"
পরদিন সকালে রাজপুত্র যখন ঘুম ভেঙে উঠল, দেখতে পেল টেবিলের উপর সদ্য সেঁকা পাউরুটি। সেই পাউরুটির উপর নানা রকম কারু কাজ করা এবং তার ঠিক উপরে বিশাল বড় প্রাচীর এবং দরজা ওয়ালা নগরীর ছবি খোদাই করা। রাজপুত্রের মন উৎফুল্ল হয়ে উঠল। সে তখন মনের আনন্দে সেই পাউরুটি তার বাবার কাছে নিয়ে গেল। ততক্ষণে আরো দুই ছেলে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু যেহেতু তাদের স্ত্রীরা ময়দার লেচি উনুনের মধ্যে পুড়ে দিয়েছিল ফলে দুজনেরই পাউরুটি পুড়ে একাকার।
রাজামশাই তো সবচেয়ে বড় ছেলের থেকে পাওয়া রুটি সোজা চাকর-বাকরেরর খাবার ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। মেজো ছেলের আনা পাউরুটির দশাও একই রকম। কিন্তু যেই মাত্র তিনি রাজপুত্র ইভানের আনা পাউরুটিটা দেখলেন খুশিতে তাঁর মুখ চকচক করে উঠলো। রুটি খেয়ে তিনি বললেন, "এত ভাল পাউরুটি আমি আগে কখনো দেখিনি। এটা নিঃসন্দেহে কোন একটা বিশেষ উৎসবে খাওয়ার মতন রুটি।"
রুটি বানানোর পরীক্এষা শেষ হওয়ার পর রাজামশাই এক বিশাল ভোজের ব্যবস্থা করলেন। তিনি তাঁর তিন ছেলেকেই বললেন তারা যেন ঠিক পরের দিন তাদের স্ত্রীকে সঙ্গে করে সেই ভোজে উপস্থিত হয়।
ছবির সূত্রঃ ফ্রিপিক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন