ব্যাং রাজকুমারী - পর্ব ১
(রুশ রূপকথা) ভাবানুবাদঃ- অনন্যা মণ্ডল
সে অনেক বছর আগের কথা। রাশিয়ায় এক রাজা ছিলেন। তাঁর ছিল তিন ছেলে। তারা প্রাপ্তবয়স্ক হতেই একদিন তিন ভাইকে ডেকে পাঠালেন তিনি।
বললেন, "শোনো বাছারা, আমি বুড়ো থুড়থুড়ে হয়ে যাওয়ার আগেই বাপু তোমরা এবার বিয়ে থা করে ফেলো। আমারও তো সাধ যায় একটি দুটি নাতি নাতনির মুখ দেখি।"
ছেলেরা বললে "বেশ তবে তাই হোক! আপনার আশীর্বাদ নিয়ে এবার আমরা বিবাহের প্রস্তুতি শুরু করি। কিন্তু বিয়ে যে করবো তেমন কন্যা কোথায় পাই ?"
রাজা বললেন, "এক কাজ কর তোমাদের তীর ধনুক নিয়ে বেরিয়ে পড়ো খোলা মাঠে। প্রত্যেকে নিজের নিজের ধনুক নিয়ে একটি করে তীর ছুঁড়ে দ্যাখো সেই তীর যেখানে গিয়ে পড়বে সেইখানেই পাবে তোমাদের বিবাহযোগ্যা পাত্রী"।
যেমন বলা তেমন কাজ। রাজার ছেলেরা তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে তীর ধনুক হাতে বেরিয়ে পড়ল বিয়ের কনে খুঁজতে। বড় ছেলে প্রথমে তীর ছুঁড়লে। তার তীর নিয়ে পড়লো বিখ্যাত এক আমিরের উঠোনে। সেখান থেকে সেই তীর হাতে করে আনল তারই কন্যা। দ্বিতীয় জনের তীর গিয়ে পড়ল এক প্রতিপত্তিশালী বণিকের বাড়িতে। তার কন্যা পেল সেই তীর। আর সবচেয়ে ছোট জন, রাজপুত্র ইভানের তীর এত দূরে উড়ে গিয়ে পড়ল যে, সে আশেপাশে কোথাও সেই তীরের খোঁজ পেল না। শেষ পর্যন্ত অনেক দূর হেঁটে সে এসে পড়ল এক জলা জায়গায়। সেখানে এসে দ্যাখে একটা ব্যাং এর মুখে তার সেই তীর।
রাজপুত্র তার সামনে গিয়ে বলে, "এই তো আমার তীর। ফেরত দাও আমাকে।"
ব্যাং উলটে জবাব দেয়, "বেশ দিতে পারি, কিন্তু তাহলে আমাকে বিয়ে করতে হবে।"
রাজপুত্র তো হতভম্ব। সে আপত্তি জানিয়ে বলে, "না, না, তা কী করে হয়? একটা ব্যাং শেষ পর্যন্ত হবে আমার বিয়ে করা বউ! অসম্ভব!"
"কিন্তু রাজার ইচ্ছে মেনে চলাই তো তোমার কর্তব্য, রাজপুত্র।"
প্রথমে অনেক আপত্তি করার পর শেষমেশ রাজপুত্র নিজের ভাগ্যের কাছে নতিস্বীকার করে সেই ব্যাং-টিকেই নিয়ে এল রাজপ্রাসাদে।
তারপর রাজা তিন ছেলের জন্য বিবাহের ব্যবস্থা করলেন। সবচেয়ে বড় ছেলের বিয়ে হলো সেই আমিরের কন্যার সঙ্গে, মেজো ছেলের বিয়ে হলো বণিকের মেয়ের সঙ্গে আর আমাদের অভাগা রাজপুত্র ইভানের বিয়ে হল সেই ব্যাং-এর সঙ্গে।
বিয়ের সব আয়োজন শেষ হওয়ার পর আবার তিন ছেলের ডাক পরল রাজার কাছে।
রাজা এবার বললেন "আমি দেখতে চাই তোমাদের মধ্যে কার বউ সবচেয়ে ভালো দর্জির কাজ জানে। প্রত্যেকে কাল আমার জন্য একটা করে জামা তৈরি করে আনবে।"
তিন ছেলে রাজাকে প্রণাম করে নিজের নিজের স্ত্রীর কাছে চলে গেল। কিন্তু রাজপুত্র ইভান মুখ ভার করে নিজের ঘরে ফিরে মন মরা হয়ে বসে রইল। এমন সময় সেই ব্যাং লাফাতে লাফাতে তার কাছে এলো, জিজ্ঞেস করল, "রাজপুত্র, তোমাকে দেখে বড়ই দুঃখী মনে হচ্ছে। তুমি কি কোনো সমস্যায় পড়েছ?"
"আমার বাবা বলেছেন আমাদের তিন ভাইয়ের স্ত্রীকে প্রত্যেককে তাঁর জন্য একটি করে জামা তৈরি করতে হবে কালকের মধ্যে। এখন কী উপায়?"
ব্যাং বললে, "কোন চিন্তা নেই রাজপুত্র, তুমি এখন ঘুমাতে যাও। কাল সকালে সব আয়োজন হয়ে যাবে।"
এই কথা শুনে রাজপুত্র তো ঘুমাতে চলে গেল। আর ওদিকে সেই ব্যাং-টা লাফ দিয়ে বারান্দা থেকে নিচে নেমে এলো। আর এসে তার সেই ব্যাঙের চামড়া খুলে ফেলে সুন্দরী বুদ্ধিমতী রাজকন্যা ভাসিলিসার রূপ ধারণ করলে। তার রূপের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
সেই রাজকন্যা হাততালি দিয়ে ডাক দিল, "কোথায় গেল আমার সব চাকরবাকরের দল? শোনো কাল সকালের মধ্যে একটা জামা বুনে দিতে হবে, ঠিক যেমনটি আমার বাবা পড়তেন তেমন একটি জামা তোমরা প্রস্তুত করো।"
পরের দিন রাজপুত্র ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেল সেই ব্যাঙ একটা লিনেনের তৈরি নতুন তৈরি জামা গায়ে দিয়ে হাজির হয়েছে তার সামনে। রাজপুত্র তো খুব খুশি। রাজপুত্র সেই জামা নিয়ে গিয়ে তার বাবার কাছে উপস্থিত হলো। ততক্ষণে বাকি দুই ছেলেও হাজির হয়েছে নতুন জামা নিয়ে। সব থেকে বড় ছেলে তার স্ত্রীর বানানো জামা রাজাকে দিল। রাজা বললে "বাহ এই জামা আটপৌরে পরার জন্য বেশ হবে!"
তারপর দ্বিতীয় ছেলে তার স্ত্রীর তৈরি জামা রাজাকে দিল। রাজা বললেন "এই জামা পরে শুধুমাত্র স্নানের ঘরেই যাওয়া যাবে।"
সবার শেষে রাজপুত্র ইভান তার আনা জামাটা খুলে দেখালো। কী সুন্দর সেই জামা! সোনা রূপার জরি দিতে বোনা নক্সা দেখে রাজামশাই তো বেজায় আনন্দিত। রাজামশায় বলে বসলেন, "এ তো খাসা হয়েছে! এই হল জামার মতন একখান জামা। উৎসব অনুষ্ঠানে আমি এই জামা পরতে পারবো!"
এই কাণ্ড দেখে রাজার বড় দুই ছেলে নিজেদের ঘরে যাবার সময় ফিসফিস করে বললে, "ইভানের বউ নিশ্চয় ব্যাং নয় আসলে সে ডাইনি।"
ছবির সূত্রঃ ফ্রিপিক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন