হাড় মজবুত করতে চাও? তাহলে রোজ শশা খাও!
লেখিকাঃ- রীয়া অধিকারী
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তোমারা যারা ছোট তোমরা তো অনেক রকমই ফল খেতে ভালোবাসো আবার কেউ ভালবাসো না। কিন্তু তোমরা কি জানো, তোমরা সব সময় যেটা সাল্যাড বা ফল হিসাবে খেয়ে থাকো সেই শসা তোমাদের জন্য কতটা উপকারী, তার মধ্যে আছে কি কি পুষ্টিগুণ?
এসো জানা যাক শসার গুণ সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ-
শসা গোয়ার্ড ফ্যামিলির অন্তর্গত কিউকার বিটাস গোত্রের একটি উদ্ভিদ। লতানো উদ্ভিদে জন্মানো ফলটি লম্বাটে আকৃতির প্রায় ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা সবুজ রঙের হয়। ভেতরের রং হয় সাদাটে সবুজ, মাঝের অংশে প্রচুর বীজ থাকে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে একটি উদ্ভূত হলেও বর্তমানে সারা বিশ্বে পাওয়া যায় এবং বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয় ।
আমাদের দেশের গরমকালের পুষ্টিকর এবং সস্তা ফল হল শসা। এটি শুধু শরীর ঠান্ডা করে এরকম নয়। এর রয়েছে আরও অনেক পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। শসা তুমি যে হিসাবে খাও না কেন তার উচ্চ জলীয় উপাদানের জন্য ডিহাইড্রেশন রোধ করে আর পেট ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
শসা হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে পারে এবং বিভিন্ন অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
এবার তোমাদের বলি শসার কি কি পুষ্টিগুণ আছে!
পুষ্টিগুণ:
শসাতে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, রাইবোফ্লোবিন, ভিটামিন বি সিক্স, ফোলেট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, থিয়ামিন, নিয়াসিন, ইত্যাদি উপাদান। ১০০ গ্রাম শসাতে মাত্র ৩০০ ক্যালোরি থাকে সেই কারণে শসা ওজন কমানোর জন্য দারুন উপকারী।
ভিটামিন এ ভালো দৃষ্টিশক্তির জন্য, ভিটামিন বি হিমোগ্লোবিন তৈরিতে এবং ভিটামিন কে তোমাদের মত ছোট বাচ্চাদের হাড়ের গঠনকে মজবুত করতে সাহায্য করে।
হজমে সহায়তা: শসার ভিটামিন, ফাইবার এবং জলীয় অংশ হজম করতে সাহায্য করে। যদি প্রতিদিন শসা খাও তোমার তবে তোমাদের পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমে যাবে।
রক্তচাপ ও শর্করা নিয়ন্ত্রণ: শসাতে আছে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। এই দুই উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।এছাড়া শসা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমাতে: ভিটামিন বি ওয়ান, ভিটামিন বি ফাইভ এবং ভিটামিন বি সেভেন উপস্থিত থাকে শসাতে, যা তোমাদের মানসিক উদ্বেগ ও চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
আর্দ্রতা বজায় রাখতে: শসার ৯০% যেহেতু জল, তাই তোমাদের শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং শরীরের জলশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের উপকারিতা: নিয়মিত শসার ব্যবহার তোমাদের মলিন ত্বককে আর্দ্র ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন বি, রাইবোফ্লোবিন, নিয়াসিন এবং ভিটামিন সি তোমাদের ত্বককে করে তুলবে সুন্দর ও সতেজ ।
ত্বকের ছোটখাটো পোড়া বা ফেটে যাওয়াতে যদি তোমরা শসা ব্যবহার করো তাহলে উপকার পাবে।
ব্যথা নাশক: শসার মধ্যে থাকা ফ্ল্যাবোনয়েড ব্যথা কমাতে কাজ করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে: শসায় পিনোরেসিনল, সেকোআইসোলারি সেরিসিনল এবং ল্যারিসারিসিনাল নামক লিগানানের থাকে। এই উপাদান গুলি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
কিডনির পাথর দূর করতে: শসার জলীয় অংশ দেহের বর্জ্য ও দূষিত পদার্থ বের করতে দারুণ কাজ করে। নিয়মিত শসা খেলে কিডনিতে যদি পাথর তৈরি হয় তা গলে যেতে সাহায্য করে। ইউরিনারি, ব্লাডার, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে শশা।
এবার তোমাদেরকে বলি যে শসা কিভাবে তোমাদের হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে
শসা তে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং কে ।
ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে, যা হাড়ের ম্যাট্রিক্স গঠনে সাহায্য করে।
অন্যদিকে ভিটামিন কে হাড়ের ফাটল ধরাকে প্রতিরোধ করে এবং ক্যালসিয়াম শোষণ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন কে, যদি কম গ্রহণ করা হয় তাহলে শরীরের ফ্র্যাকচার এবং অস্ট্রিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই যদি তোমরা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় শসা রাখো হাড়ের এই সমস্ত রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় ,এবং ছোট থেকেই হাড় মজবুত ভাবে গড়ে ওঠে।
ওপরে সমস্ত তথ্য গুলি থেকে তোমরা জানতে পারলে তোমাদের খাদ্য তালিকায় রোজ শসা রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
তোমরা নিশ্চয়ই স্যালাড, জুস বা সাধারণ ফল হিসেবে এটাকে খেতে খুবই ভালোবাসো।কিন্তু তোমাদের কি রোজ একি ভাবে শসা খেতে ভালো লাগে? নিশ্চয়ই না, তাই জন্যই তোমাদের জন্য ভেবেছি কয়েকটি চটজলদি রেসিপি।
মা-কে বলো, তোমাদের জন্য এই রেসিপিগুলো তৈরি করে দিতে আর স্যালাডগুলো তো তোমরা চাইলে নিজেরাও বানিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু কাটাকুটির সময় অবশ্যই বড়দের সামনে রেখে কাটাকাটি করবে।
চটজলদি তৈরি করতে পারা শসার কিছু রেসিপিঃ-
১) আপেল শসার স্যালাড
উপকরণ: কুচি করে নেওয়া শসা ও আপেল, লেবুর রস, কিশমিশ, কাঠবাদামের কুচি, পুদিনাপাতা কুচি, ঘন টকদই, সামান্য চিনি, গোলমরিচগুঁড়ো, বিট লবণ পরিমাণ মতো, দানা ফেলে নেওয়া কাঁচা লঙ্কা কুচি।
পদ্ধতি: একটি পাত্রে জল ঝরানো দই নিয়ে তার মধ্যে চিনি, গোলমরিচগুঁড়ো এবং বিট লবণ দিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিতে হবে। এবার এরমধ্যে একে একে আপেলকুচি, শসাকুচি, কিশমিশ, ও বাদামকুচি এবং লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে
সমস্ত উপকরণগুলি ভালোভাবে মিশিয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টা ফ্রিজে রাখতে হবে। ফ্রিজ থেকে বের করে পুদিনা ও কাঁচা লঙ্কা-কুচি মিশিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
২) শসার ইডলি
পদ্ধতি: চাল ও ডাল সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে তারপর মিক্সিতে চাল ও ডাল ভালো করে পেস্ট করে নিতে হবে তার সাথে কুড়ানো শসাকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।মিশ্রণটি কয়েক ঘন্টা ফুলে ওঠার জন্য রেখে দিতে হবে। মিশ্রণটির মধ্যে পরিমাণ মতো লবণ,লঙ্কা কুচি ও প্রয়োজন হলে অল্প জল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর ইডলি স্টিমারে, জল গরম করতে দিয়ে ইডলির ছাঁচে সামান্য তেল ব্রাশ করে প্রতিটা ছাঁচে অল্প অল্প করে মিশ্রণটি দিয়ে দিতে হবে। এরপর ২০ থেকে ২৫ মিনিট স্টীম করতে হবে। কুড়ি থেকে ২৫ মিনিট পর ছাঁচ থেকে ইডলি গুলি নিয়ে গরম গরম নারকোলের চাটনি ও সম্বরের সাথে পরিবেশন করতে হবে।
৩) শশা পাস্তার স্যালাড
পদ্ধতি: প্রথমে যেকোনো রকম পাস্তা পরিমাণ মতো নিয়ে গরম জলে নুন দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। পাঁচ থেকে দশ মিনিট সেদ্ধ হওয়ার পরে ভালো করে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে।
অন্য একটি পাত্রে শসা কুচি টমেটো কুচি সামান্য লেবুর রস, অলিভ কুচি, অলিভ অয়েল এবং যেকোনো রকমের চিজ গ্রেট করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার সেদ্ধ করা পাস্তাগুলিকে মিশ্রণটির সাথে মিশিয়ে নিয়ে সামান্য অরিগানো, গোলমরিচ, বিট লবণ ও চাট মসলা ছড়িয়ে পরিবেশন করতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন