Dog Gone - হারিয়ে যাওয়া পোষা কুকুরকে ফিরে পাওয়ার গল্প
লেখিকাঃ- অনন্যা মন্ডল
একটা ফুটফুটে গোল্ডেন রিট্রিভার বা ল্যাব্রাডর কার না পছন্দ? আর তেমনই একটা কুকুরকে নিয়ে যদি হয় সিনেমা তাহলে তো কথাই নেই। এইরকমই একটা সিনেমার গল্প আজ আমরা জানবো। এই সিনেমার নাম 'ডগ গন' (Dog Gone) - একটা হারিয়ে যাওয়া পোষা কুকুরকে ফিরে পাওয়ার গল্প।
গল্প শুরু হয় ফিল্ডিংয়ের হাত ধরে। সে কলেজে একটি মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়। কিন্তু সেই মেয়েটি তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে না চাওয়ায় ফিল্ডিং দুঃখিত বোধ করে। হঠাৎ একদিন সে দেখে সেই মেয়েটি, যাকে সে বন্ধু বানাতে চেয়েছিল, সে একটি কুকুরকে আদর করছে এবং খুব হাসছে। সেই দেখেই ফিল্ডিং এর মাথায় আসে একটি কুকুর পুষলে কেমন হয়? হয়তো তা দেখে মেয়েটি তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইবে। এমনটাই ভেবেছিল ফিল্ডিং। অথচ সে নিজেকেই ঠিকভাবে সামলে উঠতে পারে না বলে তার বন্ধু তাকে কুকুর পুষতে অনেকবার বারণ করে।
ইতিমধ্যে দুজনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ একটা সাদাটে ল্যাব্রাডর রিট্রাভার দেখতে পায়। তাকে দেখেই ভালোবেসে ফেলে ফিল্ডিং। কুকুরটিকে সে নিজের কাছে নিয়ে আসে এবং নাম রাখে গঙ্কার। কলেজের দিনগুলোতে এই কুকুরটাই হয়ে ওঠে তার সব সময়ের সঙ্গী। কিন্তু কলেজের পড়াশুনা যখন শেষ হয়, ফিল্ডিং দেখে তার বাকি বন্ধুরা সবাই চাকরি খুঁজে নিলেও সে এখনও ঠিকই করে উঠতে পারেনি যে আসলে সে কী করতে চায় জীবনে। তার এমন ছন্নছাড়া অবস্থা দেখে তার বাবা-মাও চিন্তিত হয়ে পড়েন।
ফিল্ডিং এই সময় তার বাবা-মার কাছে ফেরত যায়। সঙ্গে যায় গঙ্কার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হঠাৎ গঙ্কারের এক আজব রোগ ধরা পড়ে। সেই অ্যাডিসন রোগে আক্রান্ত কুকুরদের প্রতি মাসে এক বিশেষ ওষুধ ইনজেকশনের মাধ্যমে দিতে হয় নাহলে তারা মারা যেতে পারে যে কোনো সময়। গঙ্কারের এই রোগ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর ফিল্ডিংয়ের কলেজের বন্ধু আসে তার সাথে দেখা করতে। তারা গংকারকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হাইকিং অ্যাডভেঞ্চার করার জন্য। এমন সময় পাহাড়ে গাছপালার মধ্যে হঠাৎ একটা শেয়াল কে দেখে তাড়া করে তার পিছু নেয় গঙ্কার। ফিল্ডিং তাকে জঙ্গলের মধ্যে দৌড়ে চলে যেতে দেখতে পায় কিন্তু তার পিছনে ধাওয়া করে না। সে নিশ্চিত জানত যে গঙ্কার ঠিক তার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু গঙ্কার যখন ফিরে আসে না, তখন সে ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে মা-বাবার কাছে গিয়ে পুরো ঘটনা জানায়। ততদিনে ফিল্ডিং এর বাড়িতে সকল সদস্যের খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিল গঙ্কার। আর তাই গঙ্কারের হারিয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় তক্ষুণি তাকে খোঁজা শুরু করা হয়।
গঙ্কার কে তখন পশু চিকিৎসা কেন্দ্র, হাসপাতাল, কেনেল এবং আরো বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করা হচ্ছে। তাকে না খুঁজে পাওয়ার কষ্ট যখন আমরা ফিল্ডিং ও তার বাবা মার মুখে স্পষ্ট দেখতে পাই, তখন আমাদের মনটা আরো খারাপ করে দেয় ফ্ল্যাশব্যাকের কিছু দৃশ্য। তখন আমরা দেখি ফিল্ডিং এর মা গিনির অল্পবয়সের গল্প। কম বয়সে গিনিরও একটি পোষা কুকুর ছিল। নাম ওজি। দুর্ভাগ্যবশত সেই কুকুরটি মারা গিয়েছিল এবং সেই সময় গিনির বাবা-মা খুবই নিস্পৃহ ছিল এই বিষয়টি নিয়ে। ছোট্ট গিনির সেই ঘটনা ঘিরে সমস্ত দুঃখ আর চাপা কান্না আবারও যেন তাকে তাড়া করে বেড়ায় গঙ্কার হারিয়ে যাওয়ার পর। অতীতের সেই ছোট্ট গিনি আর ফিল্ডিং এর ভালোবাসা এবং আদরের পোষ্য কে হারিয়ে ফেলার দুঃখ যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় এই সিনেমায়।
অন্যদিকে সিনেমা জুড়ে চলতে থাকে গঙ্কারের খোঁজ। ফিল্ডিং এখানে-ওখানে খুঁজে বেড়ায় তার একমাত্র বন্ধুকে। গঙ্কার কে হারানোর পরে ফিল্ডিং বুঝতে পারে যে, সেই ছিল তার একমাত্র বন্ধু। সবসময় সবাই তাকে তার ব্যর্থতার জন্য অবহেলা করেছে। তার বন্ধুরা তাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। তার বাবা তাকে বকাবকি করেছে; কিন্তু একমাত্র গংকার কোন শর্ত ছাড়াই তাকে ভালোবাসা এবং সঙ্গ দিয়ে গেছে সমস্ত খারাপ সময়ে, যখন কেউই তার সাথে ছিল না। এইসব পুরোনো কথা যত ফিল্ডিং এর মনে পড়তে থাকে তত তৎপরতার সঙ্গে সে গংকারের খোঁজ করে বেড়ায়। এভাবে একসময় তার নিজের শরীরে ভেঙে পড়ে। প্রতিদিন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে সে বাড়ি ফেরে। কিন্তু গংকারের কোন খোঁজ পায় না। অন্যদিকে তার মাও অনুসন্ধানের ত্রুটি রাখেননা। সারা শহরের বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদপত্র এবং মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে গংকারের নিখোঁজ হওয়ার পোস্টার ছাপা হয়। সারা শহরে ফ্লায়ারস পাঠানো হয়। এমনকি একটি জাতীয় সংবাদপত্র পর্যন্ত গংকারের নিখোঁজ হওয়ার খবরটি তুলে ধরে। ফলে একসঙ্গে এখন অনেক লোক গঙ্কারের খোঁজ করতে থাকে। এরই মধ্যে প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে যায়।
আমরা আগেই বলেছিলাম গংকারের একটি অদ্ভুত অসুখ ছিল। যে অসুখের কারণে প্রতি মাসে তাকে একটি বিশেষ ওষুধসহ ইনজেকশন দেওয়া হতো। তিন সপ্তাহ নিখোঁজ থাকা থাকার জন্য তার আগামী ইঞ্জেকশনের দিন এগিয়ে আসছিল দ্রুত। অথচ তখনও তার কোনই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। অন্যদিকে আবার ফিল্ডিং এর স্বাস্থ্য আরো খারাপ হতে থাকে, গংকারের জন্য দুশ্চিন্তায় সে দিন দিন আরো দুর্বল হয়ে পড়ে, ফিল্ডিং খাওয়া, ঘুম ভুলে সারাক্ষণ গঙ্কারের কথা ভাবতে থাকে।
এমন সময় হঠাৎ একটি ফোন আসে এবং ফোনে জানা যায় অ্যাডিসন রোগে আক্রান্ত একটি কুকুরের খোঁজ পাওয়া গেছে। কিন্তু যখন ফিল্ডিং এবং তার বাবা মা সেখানে গিয়ে পৌঁছয় তারা জানতে পারে সেই কুকুরটি গঙ্কার নয়। এবারেও গঙ্কারকে না পেয়ে ফিল্ডিং আরো অসুস্থ বোধ করতে থাকে। এবার তার বাবাও গঙ্কারের আশা ছেড়ে সমস্ত অনুসন্ধান বন্ধ করে ছেলের শরীরের প্রতি যত্নশীল হন। হাসপাতালে তার চিকিৎসা শুরু হয়। সেখানে তার আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগ ধরা পড়ে। এরই মধ্যে ফিল্ডিং-এর পরিবার আরেকটি কুকুরের খোঁজ পায় এবং এই কুকুরটাই ছিল আমাদের হারিয়ে যাওয়া গঙ্কার। সৌভাগ্যবশত তার ইনজেকশনের দিন পেরিয়ে যাওয়ার আগেই তাকে পাওয়া যায়। সিনেমাটির শেষ হয় যখন ফিল্ডিংয়ের একটি জরুরি অপারেশনের পরে আমরা দেখি, সে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে এবং পাশেই শুয়ে আছে তার প্রিয় বন্ধু, পোষ্য গংকার। দুই বন্ধুই বেজায় খুশি অনেকদিন পর দেখা হওয়ার আনন্দে।
তাহলে এই গল্প থেকে আমরা কী শিখলাম বলো দেখি? একটা কুকুরও কিন্তু মানুষের কাছের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। হয়ে উঠতে পারে সব সময়ের সঙ্গী। আর এটাও দেখলাম যে, আমরা সত্যিই যদি মন থেকে কিছু চাই এবং তার জন্য চেষ্টা করতে থাকি, তাহলে আমাদের আশা একদিন অবশ্যই পূরণ হবে। ঠিক যেমন এই সিনেমায় ফিল্ডিং হারিয়ে ফেলেও খুঁজে পেল তার প্রিয় কুকুর গঙ্কার-কে।
এই সুন্দর বন্ধুত্বের গল্পটা শুনে কি এবার তোমাদের সিনেমা টা দেখতে ইচ্ছে করছে? চটপট সার্চ করো নেটফ্লিক্স অ্যাপে। সেখানে বিভিন্ন ভাষায় সাবটাইটেল সহ সিনেমা টা তোমরা দেখতে পারে। তোমাদের এই সিনেমাটা খুঁজে পাওয়ার সুবিধার জন্য বলে রাখি, এই সিনেমার ডাইরেক্টর স্টিফেন হেরেক। আর এখানে ফিল্ডিং এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জনি বর্কল্ড। আর ফিল্ডিং এর বাবা মা এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যথাক্রমে রব লো এবং কিম্বার্লে উইলিয়ামস।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন