আরশদীপ সিং - ভারতের সর্বকনিষ্ঠ বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফার

 

লেখিকাঃ- সোমাশ্রী দত্ত

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

শিশুর জীবনে পুঁথিগত শিক্ষা প্রয়োজনীয় হলেও শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষা শিশুর সার্বিক বিকাশ ঘটাতে পারে না। পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের নাচ, গান, আঁকা, ছবি তোলা, ইত্যাদি শখগুলির উপর নজর দেওয়া উচিৎ। হয়ত পরবর্তীকালে দেখা যাবে, শিশুর এই শখগুলির উপর দক্ষতা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে সেটিই তাকে শ্রেষ্ঠতম করে তুলেছে।

এরকমই একজন শ্রেষ্ঠতম সর্বকনিষ্ঠ ফোটোগ্রাফার আরশদীপ সিং-এর গল্প আমরা প্রায়শই শুনতে পাই, যে অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার নাম। 

ছবিঃ www.arshdeep.in
ভারতে পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধরে ২০০৭ সালে জন্মগ্রহণ করে আরশদীপ সিং। বন্যপ্রাণীর ছবি তোলা ছিল তার নেশা। জলন্ধরের এপিজে বিদ্যালয়ে পড়াকালীন আরশদীপ পড়াশোনার পাশাপাশি প্রাণীদের ছবি তোলার দিকে মনোনিবেশ করে। 

ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে বন-জঙ্গল, অভয়ারন্যে ঘুরে বেড়াত আরশদীপ। তার বাবারও অরণ্য, বন্যপ্রাণী, বিভিন্ন পাখির ছবি তোলার প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল। একদিন আরশদীপের বাবা মিঃ রণদীপ সিং অরণ্যে পাখির ছবি তুলছিলেন। বাবার ছবি তোলা দেখে আরশদীপ মুগ্ধ হয়। তারও ছবি তোলার দিকে আগ্রহ জন্মায়। ছেলের আগ্রহকে আরও উৎসাহ দিয়ে যথাযথ অনুশীলনের ব্যবস্থা করেন তার পিতা রণদীপ সিং। বাবার পাশাপাশি মা-এর অবদানও আরশদীপের জীবনে কম নয়। তার মা-এর প্রবল সমর্থন আরশদীপকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। তার সুন্দর ফটোগ্রাফির জন্য সে অনেক পুরষ্কারে পুরস্কৃত হয়েছে। 

২০১৮ সালে "বিবিসি ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার"-এ জয়ী হয়ে তার পরিবারের স্বপ্নকে সার্থক করে। এছাড়াও, আরশদীপ জাপানে "নেচার বেস্ট ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার” হিসেবে ২০১৮ সালে খ্যাতি লাভ করে। কম বয়সী বন্যপ্রাণী বিষয়ক ফটোগ্রাফার হিসাবে ইউএসএ এবং লন্ডনে "কমেডি ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার" নামে পরিচিতি পায়। এরপর ২০১৯ সালে "নেচার বেস্ট ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার" –এর জন্য পুরস্কৃত হয়েছে আরশদীপ। 

তার বাবা, মিঃ রণদীপ সিং হলেন তার প্রশিক্ষক ও পরামর্শদাতা। তার বাবা একজন শিক্ষকের মত তার সমস্ত প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করেছেন ও পথপ্রদর্শকের কাজ করেছেন। ছেলেকে উৎসাহিত করতে ও তার মনোবলকে আরও দৃঢ় করে তোলার জন্য টিম ল্যামান এবং ডেভিড ইয়ারোর মতো কিছু বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফারদের কাজের বিবরণ ছেলেকে জানতে সাহায্য করেন ও তাঁদেরকে অনুসরণ করার শিক্ষা দেয়। তার বাবা মনে করতেন খ্যাতনামা মানুষদের কাজের বিষয়ে ছেলেকে অবগত করানো হলে সে আরও বেশি অনুপ্রেরিত হবে ও তার দক্ষতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। মিঃ রণদীপ সিং প্রতিদিন কিছু শেখা বা অনুশীলন করায় বিশ্বাস করতেন।

আরশদীপ বয়সে অনেক ছোট হওয়া সত্ত্বেও তার সৃজনশীলতাকে বাস্তব জীবনের পরিস্থিতিতে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিল। ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর ছবি ক্লিক করা তাকে প্রচুর ধৈর্য ও সহনশীলতা শিখিয়েছে। আরশদীপ যে শুধুমাত্র ক্যামেরার মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর ছবি তুলে দক্ষতা অর্জন করেছে তাই নয়, সে বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণের ব্যাপারেও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল। বন্যপ্রাণী পরিবেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তাই তাদের উপেক্ষা করা ঠিক নয়। এই কারনেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষনের দিকে আরশদীপের বিশেষ আগ্রহ ছিল।

কেউ যদি ফটোগ্রাফি করতে ইচ্ছুক হয় তাহলে তাকে ফটোগ্রাফির বিষয়টিকে নিয়ে ধৈর্য্য ধরতে হবে। নির্বাচিত  ফটোগ্রাফির বিষয়টির ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে হবে এবং যেকোনো শট নেওয়া ও ছবি ক্লিক করার মুহুর্তে ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

 ফটোগ্রাফির প্রতি প্রবল আবেগ ও ভালবাসা থাকলেও আরশদীপের পড়াশোনার কোন ক্ষতি হয়নি ও তার একাডেমিকে কোন প্রভাবও পড়েনি।  আরশদীপ ও তার পরিবার অভয়ারণ্যে ভ্রমণ এবং বন পরিদর্শন সমস্ত ছুটির দিনগুলিতে করত। এইভাবে, তার স্কুলের সিলেবাস অনুযায়ী পড়াশোনা করা ও হোমওয়ার্কে মনোনিবেশ করার পাশাপাশি  ক্যামেরাতে ছবি তোলার কৌশল অনুশীলন করার সময় হয়ে যায়। 

আরশদীপ তার ফটোগ্রাফির শখ পূরণ করতে অনেক দেশ এবং শহর পরিদর্শন করেছে এবং সেই স্থানে গিয়ে অনেক দুর্দান্ত শট ক্লিক করার সুযোগও পেয়েছে। তার অনেক ছবির মধ্যে একটি বিখ্যাত পেঁচার শট তাকে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে যা প্রশংসার যোগ্য। আরশদীপ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরণের পাখি, নীল তিমি, সীল এবং ডলফিনের ছবি ক্লিক করতে চায়। শুধু তাই নয়, সে পরবর্তী অ্যাসাইনমেন্ট করতে এবং আরও অ্যাডভেঞ্চার অন্বেষণ করতে অ্যান্টার্কটিকা যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।



আরশদীপ সিং-এর তোলা বিখ্যাত প্যাঁচার শট



মন্তব্যসমূহ

এই ওয়েবজিনের জনপ্রিয় নিবন্ধঃ-

বিজ্ঞপ্তি

ছোটদের ফটোগ্রাফি শেখা - পর্ব ১ (শ্যাডো প্লে)

হাড় মজবুত করতে চাও? তাহলে রোজ শশা খাও!

ব্যাং রাজকুমারী - পর্ব ১