ঠাম্মির পুতুল
লেখিকাঃ- সায়ন্তনী ব্যানার্জী
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সাত বছরের ছোট্ট রিয়ার আজ জন্মদিন। মাসি, পিসি, দাদু, দিদা, মাস্তুতো-পিস্তুতো ভাই, বোন, পাড়ার বন্ধু, স্কুলের বন্ধুতে বাড়ি একেবারে জমজামাট। সকাল থেকে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া হই হুল্লোড় চলছে। রিয়ার আনন্দ আর ধরেনা। জন্মদিন মানেই তো আনন্দ আর প্রচুর উপহার। অতিথীরা সবাই কিছু না কিছু রিয়ার জন্য নিয়ে আসছেন।
উপহারগুলো কিন্তু রিয়া এখন দেখতে পাবে না। সেগুলো রিয়ার মা তাঁর আলমারিতে তুলে রেখেছেন। অতিথীরা সবাই চলে গেলে বের করে দেবেন। রিয়া এখন বরঞ্চ বন্ধু-বান্ধব ভাই-বোনেদের সাথে খেলুক। রিয়া তাতেই খুশী। শুধু একটাই দুঃখ, তার ঠাম্মি এই অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ হতে বেশ রাত হয়ে গেল। একে একে অতিথীরা সবাই চলে যেতে লাগলো। রিয়াও ডিনার করে নিজের ঘরে গেল। সে এখন ঘুমাতে যাবেনা। একটু পুতুল নিয়ে খেলবে। তারপর ঘুমাতে যাবে।
রিয়া তার প্রিয় টেডি বিয়ারটা আঁকড়ে ধরে আনমনে গুনগুন করে গান গাইতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে কার পায়ের শব্দ পেয়ে মুখ তুলে চাইতেই অবাক হয়ে যায়।
ওমা! এ তো ঠাম্মি দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।
সকালের বা বিকালের নিমন্ত্রিতদের মধ্যে ঠাম্মি তো ছিল না। রিয়া শুনেছে তার বাবা মা-কে বলছিলেন ঠাম্মি না কি আসতে পারবে না। তার নাকি খুব অসুখ। আর ঠাম্মি থাকেও বেশ দূরে, একটা ছোট শহরে দেশের বাড়িতে। রিয়ার বাবা কলকাতায় চাকরি সূত্রে পরিবার নিয়ে থাকেন। রিয়া তার ঠাম্মিকে খুব ভালোবাসে। কখনো দেশের বাড়ি গেলে ঠাম্মির পিছন পিছন সব সময় ঘুর ঘুর করে, একদম কাছ ছাড়তে চায় না।
সেই ঠাম্মিকে সামনে পেয়ে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে রিয়া।
“কই, বাবা যে বললো তোমার অসুখ, তুমি আসবে না?” – রিয়া জিজ্ঞেস করে।
“তোমার জন্মদিনে কি না এসে থাকতে পারি দিদুভাই” – ঠাম্মি বলেন।
“চলো আমার সাথে খেলবে চলো” – এই বলে রিয়া ঠাম্মির হাত ধরে নিয়ে এসে খাটে বসায়। দেখাতে থাকে তার পুতুলের সংসার।
“দাঁড়াও দাঁড়াও দিদুভাই। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে” – ঠাম্মি বলেন।
“কী, কী সারপ্রাইজ ঠাম্মি?” – উৎসুক হয়ে রিয়া জিজ্ঞেস করে।
“এই দেখ, এটা তোমার জন্য” – ঠাম্মি একটা বড় মাপের লাল কাগজে মোড়া বাক্স দিলেন রিয়ার হাতে।
“খুলে দেখ একবার কী এনেছি তোমার জন্য” – ঠাম্মি বলেন।
ঝটপট বাক্সটা খুলে ফেললো রিয়া। ভিতরে রয়েছে ভীষণ সুন্দর একটা ডল পুতুল।
কিন্তু একী? ডল পুতুলটা এরকম ঠাম্মির মতো দেখতে কেন? শুধু তাই নয়, ড্রেসও করেছে ঠাম্মির মতো।
অবাক হয়ে রিয়া ঠাম্মির দিকে তাকায়। ঠাম্মি মুচকি হেসে তাকে বলে, “কেমন সারপ্রাইজ দিলুম দিদুভাই, বলো তো?”
“কিন্তু ডলটা তোমার মতো দেখতে কেন ঠাম্মি?” – অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে রিয়া।
“এই ডল পুতুলটা এখন থেকে তোমার কাছেই থাকবে, সব সময়। আসলে কী জানো দিদুভাই, আমি তো তোমার থেকে এত দূরে থাকি, সব সময় তোমায় দেখতে আসতে পারি না। বড্ড মন কেমন করে। তোমারও তো ইচ্ছা করে আমার কাছে যেতে। তাই ভাবলাম আমার মতো দেখতে যদি একটা ডল তোমায় উপহার দিই তাহলে সেই ডলটাই তোমার ঠাম্মির অভাব পূরণ করে দেবে ।”
“ঠিক বলেছ ঠাম্মি। এই ডলটা আমি কখনো কাছ ছাড়া করব না” – পরম আনন্দে ডলটা আদর করতে করতে রিয়া বলে।
“তাহলে তুমি ডলটা নিয়ে খেলো, আমি এখন যাই দিদুভাই” – এই বলে ঠাম্মি দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন।
“না, না ঠাম্মি, এখনই যেও না। আরেকটু থাকো না আমার সাথে”- এই বলতে বলতে রিয়া হাত বাড়িয়ে ছুটে গেল ঠাম্মির দিকে, আর তখনই সব কেমন ঘোলাটে হয়ে গেল তার চোখের সামনে। ভীষণ ঘুম পেতে লাগল রিয়ার। ঘুমিয়ে পড়ল সে।
সকালবেলা রিয়ার মা এসে ডাকতে লাগলেন মেয়েকে।
“এই রিয়া ওঠ ওঠ, দেখ তোর ঠাম্মি তোর জন্য কী গিফট পাঠিয়েছেন” – রিয়ার মা তাকে ঠ্যালা দিতে থাকে।
ঘুম ঘুম চোখে রিয়া উঠে বসে।
“কী বলছ মা। কাল রাতেই তো ঠাম্মি নিজে হাতে আমাকে সারপ্রাইজ গিফটটা দিয়ে গেল। কী সুন্দর একটা ডল পুতুল। জানো মা, পুতুলটা না এক্কেবারে ঠাম্মির মতো দেখতে, ঠাম্মির মতো ড্রেসও করা। এই তো এখানেই রয়েছে,” – এই বলে রিয়া তার ঠাম্মির থেকে পাওয়া উপহারটা দেখানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল।
কিন্তু আশ্চর্য ব্যপার হলো পুতুলটা সে কোথাও দেখতে পেল না।
“মা পুতুলটা কোথায় গেল? খুঁজে পাচ্ছি না তো!”
“কোন পুতুলটা?”
“যেটা ঠাম্মি দিয়েছিল আমায়”।
“সেটা তো বাক্স থেকে বার করাই হয়নি। ওই তো আলমারির মাথায় তোলা। দাঁড়া নামিয়ে দিচ্ছি”, - এই বলে রিয়ার মা একটা লাল কাগজে মোড়া বাক্স এনে দেয় মেয়েকে।
“আরে এই তো এই বাক্সটাই দিয়েছিল কাল ঠাম্মি” – রিয়া বাক্সটা খুলে তার ডল পুতুলটা দেখায় মা-কে। একদম ঠাম্মির মতো দেখতে ও তাঁর মতো ড্রেস করা একটা পুতুল।
“এই দেখো মা ঠাম্মির দেওয়া গিফট!” – এই বলে তার ডল পুতুলটা দেখায় মা-কে। সত্যিই তো একদম ঠাম্মির মতো দেখতে ও তাঁর মতো ড্রেস করা একটা পুতুল।
পুতুল নিয়ে খুশী মনে নাচতে নাচতে রিয়া পাশের ঘরে চলে গেল। কিন্তু রিয়ার মা স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলেন। গতকাল সন্ধ্যায় কুরিয়ার মারফৎ রিয়ার ঠাম্মির পাঠানো এই জন্মদিনের উপহার এসে পৌঁছেছিল তাঁদের কাছে। সেই সঙ্গে একটা খারাপ খবরও। দুরারোগ্য অসুখে রিয়ার ঠাম্মি গতকাল সন্ধ্যায় মারা গিয়েছিলেন। রিয়ার উপহারটা উনি আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পাছে সেটি নিজে হাতে না দিতে পারেন। রিয়ার মা-বাবা এই খারাপ খবরটা আনন্দের দিনে মেয়েকে দেবেন না বলে চুপ করে ছিলেন। উপহারের বাক্সটাও আলমারির মাথায় তুলে রেখেছিলেন পরে মেয়েকে দেবেন বলে। সেই উপহার আলমারির মাথা থেকে কে নামিয়ে দিল রিয়াকে? কেই বা বললো এটা তার ঠাম্মির পাঠানো গিফট?
তাহলে কি গতকাল রাতে রিয়ার ঠাম্মির আত্মা নিজেই এসে তাঁর প্রিয় দিদুভাই-এর হাতে জন্মদিনের উপহারটা তুলে দিয়ে গেলেন?
Author bio
Name: Sayantani Banerjee
Sayantani Banerjee is by profession a digital marketer and guest blogger and loves to write on various subjects like fashion, lifestyle, digital marketing, psychology, personal development, etc. She writes in Bengali and English language.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন